নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শীতল নিবাসে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওডেল তাকে শপথ পাঠ করান। এর মধ্য দিয়ে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন নারী প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাহী প্রধানের দায়িত্ব নিলেন কার্কি। নেপালের সংবাদমাধ্যম খবর হাব-এর প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।
প্রেসিডেন্ট পাওডেল সংবিধানের ৬১ অনুচ্ছেদের অধীনে কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। ২০১৫ সালে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর এখন পর্যন্ত সব সরকারই ৭৬ অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল। তবে জেন-জিদের আন্দোলনের সমর্থনে আসীন হওয়া কার্কির নিয়োগকে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার দিনভর টানটান আলোচনার পর পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছায় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এটি ছিল আন্দোলনকারীদের মূল দাবি। শীতল নিবাস ঘেরাওয়ের হুমকির মুখে প্রেসিডেন্ট শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে কার্কির নিয়োগ চূড়ান্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্কির নিয়োগকে নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ আন্দোলনের প্রত্যাশা, তার নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী শাসনব্যবস্থা ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিভিন্ন মহল মনে করছে, কার্কির অতীত কর্মজীবনের কঠোরতা ও সৎ ভাবমূর্তি এই সংকটকালে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
কে এই সুশীলা কার্কি: ১৯৫২ সালের ৭ জুন বিরাটনগরে জন্মগ্রহণ করেন সুশীলা কার্কি। তিনি নেপালের সর্বোচ্চ আদালতের একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেন। তবে ২০১৭ সালের এপ্রিলে নেপালি কংগ্রেস ও মাওবাদী কেন্দ্র তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনে। এর পেছনে উচ্চ আদালতের এক রায়ের বিরোধিতা করা হয়। জনমতের চাপ ও সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সরকার।
রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আগে কার্কি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশ নেন এবং এ সময় কারাবন্দি হন। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি পরবর্তীতে কারা নামে একটি উপন্যাস লিখেন। ২০০৮ সালে নেপাল বার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন কার্কি। ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হন তিনি। এক বছর পর পদটি স্থায়ী করা হয়। ২০১৬ সালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান কার্কি। তিনি দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত ছিলেন। তার মেয়াদকালে বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলার রায় তিনি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী জয়প্রকাশ গুপ্তকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা অন্যতম। ২০১৭ সালে বয়সসীমা পূর্ণ করায় তিনি বিচারক পদ থেকে অবসর নেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সুশীলা কার্কি
- আপলোড সময় : ১৩-০৯-২০২৫ ০১:১২:২৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৩-০৯-২০২৫ ০১:১২:২৬ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ